বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন হুগলির ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট দেবদত্তা রায়। বয়স হয়েছিল মাত্র ৩৮ বছর। সোমবার সকালে শ্রীরামপুরের শ্রমজীবী হাসপাতালের কোভিড ইউনিটে মৃত্যু হয় এই ডব্লিউবিসিএস অফিসারের। ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে প্রশাসনিক মহলে। সহকর্মীদের সকলেই হতবাক এই ঘটনায়। বাড়িতে দেবদত্তার একটি চার বছরের ছেলে রয়েছে। তাঁর স্বামীও করোনা সংক্রমিত হয়ে চিকিৎসাধীন।
জানা গিয়েছে, রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকরা যখন ফিরছিলেন, তখন ডানকুনিতে যে ট্রানজিট ক্যাম্পের ব্যবস্থা করা হয়, তার দায়িত্বে ছিলেন দেবদত্তা। সেই কাজ যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে পালন করেছেন। এর আগে পুরুলিয়ায় ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক হিসেবেও অত্যন্ত পারদর্শিতার সঙ্গে কাজ করেছেন। সহকর্মীদের কাছে খুবই জনপ্রিয় ছিলেন। তবে কোথা থেকে তিনি কোভিড ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, তা পরিষ্কার নয় কারও কাছেই। অনেকেই বলেছেন, তাঁর বাড়ি এবং কর্মক্ষেত্র, দুই জায়গাতেই করোনা সংক্রমণ যথেষ্ট বেশি। ফলে বিষয়টি এখন প্রশাসনিক কর্তাদের ভাবাচ্ছে।
দমদমের লিচুরবাগানে বাড়ি দেবদত্তা রায়ের। সূত্রের খবর, সপ্তাহখানেক ধরে তিনি অসুস্থ ছিলেন। কলকাতায় করোনা পরীক্ষা করা হলে রিপোর্ট পজিটিভ আসে। প্রথমে হোম আইসোলেশনে ছিলেন। কিন্তু অবস্থার অবনতি হলে কলকাতার কোভিড হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার চেষ্টাও করেছিলেন। কিন্তু ভর্তি হতে পারেননি। রবিবার বিকেলে অবস্থা খুবই খারাপ হয়। তখন তাঁকে হুগলির শ্রমজীবী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সোমবার সকালে ওই হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, ভর্তি হওয়ার সময়ই তাঁর শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কমে গিয়েছিল। সংক্রমণও মারাত্মক বেড়ে গিয়েছিল।
এদিকে, রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের প্রকাশিত বুলেটিন থেকে জানা গিয়েছে, দৈনিক সংক্রমণ সামান্য কমেছে রাজ্যে। শেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ১ হাজার ৪৩৫ জন। রবিবার সংখ্যাটা পৌঁছে গিয়েছিল ১ হাজার ৫৬০–এ। শনিবার সংখ্যাটা ছিল ১ হাজার ৩৪৪ জন। শুক্রবার ছিল ১ হাজার ১৯৮ জন। এদিন নিয়ে এখনও পর্যন্ত রাজ্যে মোট করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩১ হাজার ৪৪৮ জন। তবে করোনা ভাইরাস সক্রিয় রয়েছে ১১ হাজার ২৭৯ জনের শরীরে। শেষ ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে করোনার বলি হয়েছেন ২৪ জন। ফলে রাজ্যে করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৫৬ জন। তবে শেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৬৩২ জন। ফলে করোনা মুক্ত হয়ে এখনও পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ১৯ হাজার ২১৩ জন। সুস্থতার হার গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৬১.০৯ শতাংশ।
অন্যদিকে, রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কড়া চিঠি পাঠিয়েছেন বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা তথা কংগ্রেস বিধায়ক আবদুল মান্নান এবং বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী। সিপিএম বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী এদিন বলেন, ‘ইছাপুরের ১৮ বছরের তরুণের মৃত্যু হল চিকিৎসা না পাওয়ার জন্য। জয়নগরের যুবকও হাসপাতালের পর হাসপাতাল ঘুরেও জায়গা পাননি। শেষে মেডিক্যাল কলেজে খোলা আকাশের নীচে রীতিমতো অসহায় ভাবে মারা গেলেন। হামেশাই এই ধরনের ঘটনা ঘটে চলেছে। এ–সব নিয়ে সরকারের কি কোনও হেলদোল আছে? নাকি ন্যূনতম মানবিকতা বোধ আছে?’
আবদুল মান্নান এবং সুজন চক্রবর্তী এদিন একই সুরে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে রাজ্যের হাসপাতালগুলিতে অন্য রোগীদের চিকিৎসা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে প্রতিদিন অনেক মানুষকে অসহায় ভাবে মরতে হচ্ছে।’ এইজন্য তাঁরা রাজ্য সরকারের তীব্র সমালোচনাও করেছেন। সাধারণ মানুষ যাতে সঠিক স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা পরিষেবা পান, মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে তাঁরা তেমনই ১০ দফা দাবির কথাও বলেছেন। পরে তাঁরা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মুখে বড় বড় কথা না বলে এবার কাজ করুক সরকার। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে পশ্চিমবাংলা ভয়াবহ দিকে এগোচ্ছে।